কোনো নারী অন্তঃসত্ত্বা হলেন কি না, তা ঝটপট ও প্রায় নির্ভুলভাবে জানতে ব্যবহার করা হয় প্রেগন্যান্সি কিট। এই যন্ত্রের ব্যবহারও সহজ। গর্ভধারণ করলে শরীরে বিটা এইচসিজি নামে একটি হরমোন তৈরি হয়; যার উপস্থিতি প্রস্রাবেও নির্ণয় করা যায়। চাইলে নিজেই প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন। এটিই এই পরীক্ষার মূল পদ্ধতি। কিন্তু অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন সঠিক উপায়ে যন্ত্রটি ব্যবহার করা নিয়ে। ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও অনেকের মনে সংশয় দেখা দেয়।
কখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন ? ?
যাঁদের মাসিক নিয়মিত, তাঁরা মাসিক হওয়ার তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ পর এই পরীক্ষা করবেন। মাসিক অনিয়মিত হলে গর্ভাবস্থার লক্ষণ বুঝতে পারলে পরীক্ষা করুন।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কখন করব ? ?
সকালবেলার প্রথম প্রস্রাব দিয়ে পরীক্ষা করলে ভালো। দিনের যেকোনো সময় করলেও চলবে, সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখতে হবে। প্রতিটি স্ট্রিপে নির্দেশনা লেখা থাকে। সেই নির্দেশনা মেনে প্রস্রাব দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে।
প্রেগনেন্সি টেস্ট কেন সকালেই করা হয়?
হিউম্যান ক্রনিক গোনাডোট্রপিন বা (HCG)র উপস্থিতির উপর নির্ভর করেই গর্ভধারণের ফলাফল বের হয়। ওভালুয়েশন শুরু হওয়ার ১০ দিনে শরীরে উত্পাদিত প্ল্যাসেন্টার উপর এই হরমোনের উপস্থিতি নির্ভরশীল। হোম টেস্ট কিটের দ্বারা নির্ধারণ করা সম্ভব, এই স্তরে (এইচসিজি)র পৌঁছালে, তবেই পরীক্ষার সঠিক ফল মেলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালের প্রথম ইউরিন বেশি ঘন হয়ে থাকে। আর (এইচসিজি)র উপাদানটি ওই সময়ই বেশি পরিমাণে থাকে প্রস্রাবে। যত বেলা বাড়ে; ততই ইউরিন পাতলা হয় এবং তাতে (এইচসিজি)র উপস্থিতি কমতে থাকে। তাই রাতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে আপনি গর্ভবতী হলেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়ম—
একটি পরিস্কার ভায়াল বা পট বা কাপে সকালের প্রস্রাব নিবেন।তাতে কিট বা স্ট্রীপটি দাগ দেয়া জায়গা পর্যন্ত ডুবাবেন এবং ৫-১০ সেকেন্ড অপেক্ষা করবেন।তারপর তুলে ফেলবেন।রেজাল্টের জন্য ৫ মিনিট অপেক্ষা করবেন।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট রিপোর্ট কিভাবে বুঝবেন ?
স্ট্রিপে একটি রঙিন রেখা বা লাইন এলে বুঝবেন প্রেগন্যান্সি নেগেটিভ, অন্তঃসত্ত্বা নন। স্ট্রিপে পাশাপাশি দুটি রঙিন রেখা বা লাইন দেখা গেলে পজিটিভ, এমনকি হালকা রেখা হলেও পজিটিভ ধরা যাবে। মানে তিনি অন্তঃসত্ত্বা।
যদি কোনো রঙিন রেখা না দেখা যায়, তবে পরীক্ষা বাতিল বলে ধরে নিতে হবে এবং আবার আরেকটি স্ট্রিপ দিয়ে করতে হবে। পাঁচ মিনিট পর নেগেটিভ ফলাফল পজিটিভ হলেও রিপোর্টটি অগ্রহণযোগ্য।
নেগেটিভ কিন্তু মাসিক হচ্ছে না?
বাড়িতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ পেয়েছেন কিন্তু এরপরও মাসিক হচ্ছে না, তাহলে আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে আবার পরীক্ষা করবেন। এবারও নেগেটিভ হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। প্রেগন্যান্সি ছাড়া অন্যান্য কারণেও মাসিক বন্ধ হতে পারে।
প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট কতটা নির্ভরযোগ্য ? ?
প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এই কিট নির্ভুল তথ্য দেয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি ফলস পজিটিভ হতে পারে। মানে অন্তঃসত্ত্বা নয়, তবু পজিটিভ হতে পারে। যেমন এইচসিজি হরমোনযুক্ত কোনো ওষুধ সেবন করলে, কোনো কোনো রোগে এইচসিজি হরমোন অতিমাত্রায় নিঃসৃত হয় (মোলার প্রেগন্যান্সি, কোরিওকারসিনোমা, আইলেট সেল টিউমার ইত্যাদি)। গর্ভপাতের পরপর বা সন্তান জন্মের ৪ সপ্তাহের মধ্যে টেস্ট করলে পজিটিভ হতে পারে। কারণ তখনো হরমোন থেকে যায়। কিটের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পার হয়ে গেলে বা কিট ব্যবহার অযোগ্য হলে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে।
রিপোর্ট ফলস নেগেটিভ হয় কেন ?
আবার উল্টোটাও হতে পারে। রিপোর্ট নেগেটিভ দেখাচ্ছে কিন্তু আসলে আপনি অন্তঃসত্ত্বা। কেন এমন হয়? যদি নির্ধারিত সময়ের আগেই টেস্ট করে ফেলেন (মাসিকের তারিখের এক সপ্তাহ পার না হতেই)। যারা প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না বা টেস্টের আগে প্রচুর পানি পান করলে প্রস্রাবে হরমোনের মাত্রা কম থাকায় নেগেটিভ আসতে পারে।
এরপরেও সন্দেহ হলে ল্যাবে গিয়ে HCG Test করে ফেলবেন।এটা কোন ভাবেই ভুল হতে পারে না।
Reference: Prothom alo, webmd,healthline
অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারী পোস্ট। ভালো লেগেছে ও উপকারে এসেছে। ধন্যবাদ