মানুষের অনেক রকমের চর্মরোগ হয়ে থাকে।এর ভেতর “একজিমা” অন্যতম।এটি “বিখাউজ” নামেও পরিচিত। এই রোগটি সাধারণত নারীদের বেশী হয়ে থাকে।যেসব নারী সারাদিন পানি নিয়ে কাজ করে,সাবান বা সোডাজাতীয় জিনিসের সংস্পর্শে বেশী থাকে তাদের এ রোগ বেশী হয়ে থাকে।
একজিমা হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়ঃ
# চুলকানো।তারপর আস্তে আস্তে এ জায়গা শুষ্ক হয়ে যায়,অনেকটা খুশকির মত হয়ে যায়।
# ত্বক মোটা হয়ে যায়
# জ্বালাপোড়া ও ব্যথাসহ চুলকানি
# ছোট ছোট ফোস্কা পড়ে,অনেক ক্ষেত্রে পানি পড়ে।
# আক্রান্ত স্থানের রং পরিবর্তন হয়ে যায়,কালো রংয়ের হয়ে যায়।
একজিমা কেন হয়ঃ
এটোপিক একজিমা
( শরীরের যেসব জায়গায় ভাজ পড়ে, বাসাত পৌছায় না সেসব জায়গায় ু একজিমা হয়।এটি অনেকাংশে বংশগত রোগ)
ডিসকয়েড একজিমা
( এই একজিমা প্রাপ্ত বয়স্কদের বেশী হয়।১৩ বছর থেকে ২০ বছর বয়সী নারীদে মাঝে হয়ে থাকে।
এলার্জিক কনট্যাক্ট একজিমা
(নিকেল জাতীয় গহনা,বেল্ট,ঘরির বেল্ট,রাবার,বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, জুতা,টায়ার,চুলের রং,স্টেরয়েড,বিষাক্ত কাটা জাতীয় গাছ এসবের সংস্পর্শে এলে এ একজিমা হয়।
ইরিট্যান্ট কনট্যাক্ট একজিমা
( এটি পরিস্কার কারক দ্রব্য সমূহ থেকে বেশী হয়।)
সেবোরিক একজিমা
( এটি শরীরে অন্যান্য অংশের চেয়ে মাথায় বেশী হয়।)
ভেরিকোস একজিমা
( প্রবীণ লোকদের পায়ের নিচের অংশে এ ই একজিমা হয়। রক্তনালী কমচাপ ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে হয়ে থাকে)
কোন ভিটামিনের কারণে একজিমা হয় ?
জিংক এর অভাবে একজিমা হতে পারে।
কারা ঝুঁকিতে আছেন ?
১. পরিবারের কোনো সদস্যের একজিমা বা বিখাউজ থাকলে অন্যান্য সদস্যদেরও হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২. ত্বক শুষ্ক বা রুক্ষ হলে এ রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা বেশি কারন- এ ধরনের ত্বক ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারে না।
৩. বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পুর ব্যবহারের ফলেও এ রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪. এলার্জি হতে পারে এমন বস্তু যেমন- পরাগ রেণু, ধুলা, পশম, উল ইত্যাদির সংস্পর্শে একজিমার সংক্রমন হতে পারে।
৫. জিনঘটিত কোনো পরিবর্তনের ফলে ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে একজিমার সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৬. চর্মরোগে আক্রান্ত কোন রোগীর সেবাকাজে নিয়োজিত ব্যক্তির এ রোগ হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।
৭. শহরাঞ্চালে বসবাসকারী শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকে বিশেষ করে ডে-কেয়ার বা চাইল্ড কেয়ারে থাকা শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে।
৮. অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়ার ফলে, অর্থাৎ পরিবেশগত কারণেও একজিমা হতে পারে।
৯. হরমোনঘটিত কোন পরিবর্তন, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় কিংবা গর্ভাবস্থায় একজিমা হতে পারে।
১০. দীর্ঘমেয়াদী কোন রোগের কারনে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে একজিমার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে এটি হতে পারে।
একজিমা প্রতিরোধে করনীয়:
১. যেসব বস্তু বিখাউজ বা একজিমার সমস্যা বাড়িয়ে তোলে বা যেসব খাবার খেলে এটি বাড়ে তা পরিহার করতে হবে।
২. সবসময় নরম ও আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে। সিনথেটিক বা উলের পোশাকে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে তা পরা যাবে না।
৩. কাপড় পরিষ্কারের জন্য কৃত্রিম রঙ ও সুগন্ধিবিহীন সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হবে।
৪. ধূলাবালি, ফুলের রেণু এবং সিগারেটের ধোঁয়া অর্থাৎ যেগুলো থেকে অ্যালার্জি হতে পারে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
৫. আক্রান্ত স্থান চুলকানো যাবে না।
৬. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
৭. ত্বক শুষ্ক না রেখে, প্রয়োজনে কৃত্রিম রঙ ও সুগন্ধিবিহীন লোশন বা ক্রিম ব্যাবহার করতে হবে।
চিকিৎসা:
এখনো সুনির্দিষ্ট কোন মেডিসিন আবিষ্কার হয়নি।একজিমার জন্য দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নিতে হয়।বিভিন্ন লোশন,মলম ও মশ্চেয়ারাইজার দিয়ে একজিমাকে কন্ট্রোল করতে হয়।
একজিমা একটা প্যাটার্ন নিয়ে আসে, কখনো ভালো হয়,কখনো বেড়ে যায়,বিশেষ করে,শীতকালে খুবই যত্ন নিতে হয়।
একজিমা দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ
অ্যালোভেরা জেল
কলয়েডাল ওটমিল
সমুদর স্নান
নারকেল তেল
মধু
চা গাছের তেল
খাবের পরিবর্তন (যেমনঃ দুধ খাওয়া যাবে না)
অতিরিক্ত গরম এড়িয়ে চলতে হবে