স্ট্রোক কি ?
কোন কারণে মস্তিষ্কের নিজস্ব রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে স্মায়ুকোষ নষ্ট হয়ে যাওয়াকে স্ট্রোক বলে। স্ট্রোককে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় সেরিব্রো ভাসকুলার এ্যাকসিডেন্ট বলা হয়। যা বাংলা করলে দাঁড়ায়, মস্তিষ্কের রক্তনালীর দুর্ঘটনা। আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গা আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজের জন্য নির্দিষ্ট থাকে। তাই মস্তিষ্কের কোথায়, কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে স্ট্রোকের ভয়াবহতা।
সাধারণত দুই প্রকার স্ট্রোক হয়ে থাকেঃ
১. মস্তিষ্কের রক্তনালীতে কোন কিছু জমাট বাধলে যার ফলে রক্তের নালীকা বন্ধ হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের আক্রান্ত অংশের স্মায়ুকোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়।
২. মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটলে: উচ্চ রক্তচাপ এই স্ট্রোকের অন্যতম কারণ যেখানে ছোট ছোট রক্তনালীকা ছিড়ে রক্তক্ষরণ হয়, ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে চাপ বেড়ে যায় এবং অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের স্মায়ুকোষগুলো মারা যায়।
স্ট্রোকের লক্ষন সমূহ:
কোন ব্যাক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছি কিনা তা নিন্মের লক্ষন সমূহ দ্বারা বুঝা যেতে পারে ।
হাসি : হাসতে গেলে মুখ একদিকে বেকে যেতে পারে ।
হাত : দুই হাত সমান ভাবে উঠাতে নাও পারে ।
কথা : কথা বলতে গেলে পরিষ্কার ভাবে বলতে পারবে না অর্থাৎ অস্পষ্ট ভাবে কথা বলবে।
সময় : উপরের যে কোন লক্ষন দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত আপনার নিকটস্থ হাস্পাতালে যোগাযোগ করুন ।
উপরোক্ত লক্ষন ছাড়াও নিচের লক্ষন গুলো থাকতে পারে যেমনঃ
১. হঠাৎ হাত ও পায়ে অবশ অবশ ভাব বিশেষ করে শরিরের এক পাশে ডানে অথবা বামে ।
২. হঠাৎ দ্বিধাহীনতায় ভোগা, কথা বলতে বা বুজতে সমস্যা হওয়া।
৩. হঠাৎ এক চোখে বা দুই চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া ।
৪. হঠাৎ হাটতে সমস্যা হওয়া, মাথা ঘোরানো, শরিরের ভারসাম্য (Balance) কমে যাওয়া ।
৫. হঠাৎ কোন কারন ছাড়া তিব্র মাথা ব্যাথা ।
(সুত্র : আমেরিকান স্ট্রোক এসোসিয়েশন )
স্ট্রোকের চিকিৎসা একটি মূলত মালটিডিসিপ্লিনারী চিকিৎসা পদ্ধতি। সম্মানিত ডাক্তার , ডায়েটিসিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, সেবিকা, সাইক্রিয়াটিস্ট এর সমন্বয়ে এই চিকিৎসার সফলতা বয়ে আনে। এখানে মুলত স্ট্রোক পরবর্তী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হল :
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:
1) ইলেক্ট্রোথেরাপি
2) ম্যানুয়াল থেরাপি
চিকিৎসার তাৎপর্যসমূহ:
১। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করণ
(ডীপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ, পার্সড লিপ ব্রিদিং, ডায়াফ্রামেটিক ব্রিদিং, হাফিং এবং কাফিং উল্লেখযোগ্য।)
২। সঠিক পজিশনিং (খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অংশ টি। একজন স্ট্রোক রোগীর প্রপার পজিশনিং প্রথম দিন থেকে গুরুত্ব বহন করে। এনাটমিকাল পজিশন, সাইড লাইনিং, এলিভেশন একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট এর তত্ত্বাবধানে মেনে চলা উচিত।)
৩। মাংস পেশীর স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য এবং টোন বজায় রাখা ( স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্ধেনিং এপ্রোচ এর মাধ্যমে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এই রোগীর মাংস পেশীর শক্তি পুণরায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে থাকেন।)
৪৷ শরীরের স্বাভাবিক অ্যালাইনমেন্ট ফিরিয়ে আনা ( সঠিক পজিশনিং, মুভমেন্ট, এবং স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্ধেনিং এপ্রোচ এর মাধ্যমে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট স্বাভাবিক অ্যালাইনমেন্ট ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক সহায়তা করে থাকেন।)
৫। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের স্বাভাবিক নাড়ানোর ক্ষমতা বা মুভমেন্ট ফিরিয়ে আনা।
৬। ব্যালেন্স ও কো-অরডিনেশন উন্নত করা স্বাভাবিক হাঁটার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা ( ব্রিটিশ বোবাথ এপ্রোচ, মাকেন্জি মেথড ছাড়া ও বিভিন্ন এভিডেন্স বেজড পদ্ধতিতে রোগীকে স্বাভাবিক হাঁটার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক সহায়তা করে থাকেন।)
স্ট্রোক রোগীর কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা অপরিসীম। সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।
ইফতেখারুল ইসলাম পাঠান
ফিজিওথেরাপি ইনচার্জ
যোগাযোগঃ ০১৯৮৮-৫৯৪৬০৩
সি এস সি আর (CSCR Hospital)