দাঁত তুলে ফেলার পরামর্শ এখন খুব কম ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডেন্টাল চিকিৎসকরা এতটাই নিজেদের সময়োপযোগী করেছেন যে, রোগী চাইলে ক্ষতিগ্রস্ত দাঁত সংরক্ষণ সম্ভব হয়। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই রোগের মেয়াদ যত দীর্ঘায়িত হবে অথবা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে, তত তার চিকিৎসা পদ্ধতি জটিল হবে।
প্রতিটি দাঁত আমাদের চোয়ালের হাড় ও মাড়ি দ্বারা শক্তভাবে নিজ স্থানে আটকে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি মাড়ি রোগ বা দাঁতের সংক্রমণ, দুর্ঘটনা, ক্যালসিয়ামের অতিরিক্ত অভাব ও হাড় ক্ষয় বা যে কোনো কারণে যদি এ বন্ধন নষ্ট হয়ে দাঁত অতিরিক্ত মাত্রায় নড়ে যায়, তখন দাঁতকে সংরক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
দাঁত ফেলা যত সহজই মনে হোক না কেন, বিষয়টা কিন্তু অত ছোটখাটো নয়। তাই দাঁত ফেলতেও দরকার নানা সতর্কতা।
আজকে আমরা কিছু সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করবঃ
১. দাঁত তুলতে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হবে তা যদি জীবাণুমুক্ত না থাকে তবে হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাস এমনকি এইডসের মতো রোগও ছড়াতে পারে। যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তাই যেখানে-সেখানে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দাঁত ফেলবেন না।
২. ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক প্রভৃতি জটিলতা থাকলে রক্তে শর্করা, কিডনির ক্রিয়েটিনিন, রক্তচাপ ইত্যাদি দেখে নেওয়া উচিত।
৩. ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে দাঁত তোলার আগে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। যাঁরা ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল তাঁরা অবশ্যই দিনের প্রথম দিকে দাঁত তুলবেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে তারপর চিকিৎসা নিন।
৪. কী ধরনের ও কী কী ওষুধ খাচ্ছেন তা দন্তচিকিৎসককে জানান। যদি রক্ত পাতলা করার ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন বা ক্লপিডোগ্রেল জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকেন তবে দাঁত তোলার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নিয়ে দাঁত ফেলার পাঁচ দিন আগে থেকে ওষুধগুলো খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে অনুভূতিনাশকের সঙ্গে অ্যাড্রিন্যালিন ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ অনেক ক্ষেত্রে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। এসব রোগীর ক্ষেত্রে দাঁতের যেকোনো শল্যচিকিৎসার আগে প্রয়োজনে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫.গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে সাবধানতা দরকার। এ ক্ষেত্রে পেনিসিলিন গ্রহণ করা নিরাপদ। ব্যথানাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ওপিয়ড অথবা নন-স্টেরোইডেল অ্যান্টিইনফ্লামেটারি ব্যবহার করা যায়। তবে এসব ওষুধ প্রথম ও শেষ তিন মাসে নিরাপদ নয়।
সুতরাং দাঁত ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার নিকটস্থ বিডিএস ডিগ্রীধারী দাঁতের ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। অনেক রোগী না বুঝে কোয়াক এর কাছে গিয়ে দাঁত ফেলে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে কষ্ট পায়।
সম্পাদনাঃ——————————
ডাঃ মোঃ ইরফান উদ্দিন
বিডিএস চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ ৮৪২২
ওরাল এন্ড ডেন্টাল সার্জন
আইডেন্ট ডেন্টাল এন্ড ইমপ্ল্যান্ট সেন্টার