শক্ত করে মুঠ করে কাজ করলেই কনুই ব্যথা, একটি সাধারণ সমস্যা। মানুষ তার জীবনের কোন না কোন সময় এ ব্যথায় আক্রান্ত হন। ডাক্তারি পরিভাষায় এ রোগকে ল্যাটেরাল ইপিকন্ডালাইটিস বলে। ধারণা করা হতো, টেনিস খেলোয়াড়দের এটি বেশি হয় বলে, একে টেনিস এলবো বলে।
টেনিস এলবো কি ও কেন হয় ?
বাহুর হাড়ের নিচের প্রান্তের বাইরের অংশকে ল্যাটারাল ইপিকোনডাইল বলে। কনুইয়ের নিচের পেছনের পেশিগুলো এ স্থান থেকে উৎপত্তি হয়। কনুই ও হাতের কবজি বারবার পেছনে বাঁকা করে কাজ করলে, ঐ স্থানে আঘাত হয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে এবং ব্যথা হয়। এই সমস্যাকেই ল্যাটারাল ইপিকোনডাইলাইটিস বা টেনিস এলবো বলে।
কাদের হয় ?
রোগটি টেনিস বল খেলার সঙ্গে নামকরণ ও সম্পর্কযুক্ত হলেও আমাদের দেশে কর্মজীবী নারী ও গৃহবধূরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
কারা ঝুঁকিতে আছে ?
# হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার ব্যবহারকারী
# পেইন্টার বা রং মিস্ত্রি
# টাইপিস্ট, স্টেনোগ্রাফার
# সাংসারিক কাজে ব্যস্ত নারী
# যারা আতিরিক্ত হাতের কাজ করে, যেমনঃ
ধোপা, গাছ কাটা, ইট ভাঙা, ধান কাটা
ইত্যাদি।
# টেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়
# অত্যধিক মোটরসাইকেল চালনাকারী।
# বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস
যেমনঃ রিউমাটয়েড, গাউট ইত্যাদি
লক্ষণ সমুহ কি কি ?
* হাত দিয়ে কিছু তুলতে কনুইয়ে ব্যথা হয়
* ভেজা কাপড় মোচড়ানো, চামচ দিয়ে কিছু
নাড়ানো কষ্টকর হয়
* এমনকি করমর্দন করতেও অসুবিধা হয়
* ব্যথা কনুই থেকে শুরু হয়ে হাতের আঙুল
পর্যন্ত যেতে পারে
* কনুইয়ের বাইরের দিকে চাপ দিলে প্রচণ্ড
ব্যথা অনুভূত হয়
কিভাবে রোগ নির্ণয় করা হয় ?
রোগের ইতিহাস জানা এবং বিশেষজ্ঞ কর্তৃক নিজ হাতে কনুইয়ের শারীরিক পরীক্ষা করা জরুরী। এর সাথে নিশ্চিতকরণ ও অন্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য আরও আরও কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন। যেমনঃ
# রক্ত পরীক্ষা
# কনুইয়ের এক্স-রে
# কনুইয়ের আল্ট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদি
চিকিৎসা ও পরামর্শ কি ?
♣করণীয়ঃ
# হাতকে বিশ্রাম দেয়া ও দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরী
# কাজের সময় কনুইয়ের একটু নিচে “এলবো ব্যান্ড” লাগানো বেশ কার্যকরী
# গরম ভেজা সেঁক ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে উপকারী
# এ সময় ভারী কোনো কিছু ওঠানো বা মোচড়ানো যাবে না
# সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অবনতিকারক কাজ পরিহার করতে হবে
♣ঔষধঃ
রোগীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ঔষধের পরামর্শ দেয়া হয়।
যেমনঃ
ব্যথানাশক ঔষধঃ—প্যারাসিটামল, এন,এস,এ,আই,ডি ইত্যাদি।
♣ফিজিওথেরাপি:
এ রোগের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অন্যতম চিকিৎসা।
যেমনঃ
→আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি,
→শকওয়েভ থেরাপি,
→ডিপ ফ্রিকশন মেসেস থেরাপি ইত্যাদি
♣ইনজেকশন:
→কিছু ক্ষেত্রে প্রদাহের স্থানে ব্যথানাশক ইনজেকশন দেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।
→বর্তমানে আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনের মাধ্যমে এই কাজটি নিখুঁত ভাবে করা যায়।
*** সম্পাদনায় ***
ডাঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান
এমবিবিএস, এফসিপিএস
ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
পার্কভিউ হসপিটাল প্রাঃ লিঃ, চট্টগ্রাম
যোগাযোগঃ ০১৩১২ ৩৯ ৫৬ ৩৮