A Leading Doctor Chamber information Site In Chittagong

kk
4
22
a5
a3
2
5
dr3 (1)
কাশি কেন হয় ও কাশি দূর করার উপায় ?

কাশি কি ?

কাশি (cough) হলো শ্বাসনালীকে শ্লেষ্মা ও বিরক্তিকর ধুলা বা ধোঁয়া থেকে রক্ষা করার জন্য বডি ন্যাচারাল প্রসেস।বেশীরভাগ কাশি ৩ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।কোন প্রকার চিকিৎসা লাগে না।

কাশি কেন হয় ?

কাশি হলো শরীরের একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া। যদি কখনো ধুলাবালি, ধোঁয়া বা অন্য কিছু আমাদের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে, সঙ্গে সঙ্গে কাশি শুরু হয়। এ কাশির মাধ্যমে ধুলাবালি বা অন্য কোনো বস্তু শ্বাসনালি থেকে বের হয়ে যায়। এটাই হলো প্রকৃতির প্রতিরক্ষা। কাশি এভাবেই শ্বাসনালিকে পরিষ্কার রাখে। আমরা খেতে বসলে অনেক সময় খাদ্যকণা শ্বাসনালিতে চলে যায়, যদি কাশি নামক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকত, তাহলে প্রতিনিয়ত শ্বাসনালির সংক্রমণ হতো।

কাশির প্রক্রিয়াটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে শ্বাস ভেতরে নেয়, তারপর স্বরযন্ত্র বন্ধ অবস্থায় নিশ্বাস বের করার প্রচেষ্টা এবং সবশেষে সামান্য খোলা স্বরযন্ত্রের মধ্য থেকে হঠাৎ জোরে শব্দ করে নিশ্বাস ত্যাগ করা।

 

কাশি ৪ প্রকারঃ

 

১) শুকনো কাশি —-

শুষ্ক কাশিতে কফ বের হয় না। কাশতে কাশতে সামান্য সাদা কফ বের হয়। ভাইরাসজনিত রোগে সাধারণত শুষ্ক কাশি হয়; তবে সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণ হলে হলুদ কফ হতে পারে। ধূমপানের কাশি, অ্যালার্জি এবং গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজের কাশি শুষ্ক কাশি হয়।

 

 

২) ভেজা বা কফযুক্ত কাশি

শ্লেষ্মা সহ কাশি বেশিরভাগই ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে হয়।কফযুক্ত কাশিতে মিউকয়েড মিউকোপ্রুলেন্ট বা প্রুলেন্ট কফ বের হতে পারে। কফের পরিমাণ সামান্য থেকে প্রচুর পরিমাণ হতে পারে, যেমন হাঁপানি রোগে অল্প কফ বের হয়, আবার ব্রংকিয়েক্টাসিসে প্রচুর কফ বা শ্লেষ্মা বের হয়।

 

 

৩) স্বল্পস্থায়ী কাশি

স্বল্পস্থায়ী কাশি দুই সপ্তাহ স্থায়ী হয়; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। স্বল্পস্থায়ী কাশি নিম্নলিখিত কারণে হয়ে থাকে-

* ঊর্ধ্ব শ্বাসনালীর সংক্রমণ : গলা, শ্বাসনালি বা সাইনাসের সংক্রমণ যেমন- সাধারণ সর্দি, ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা, ল্যারিঞ্জাইটিস, সাইনোসাইটিস, হুপিং কাশি।

* নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ : নিউমোনিয়া, একিউট ব্রংকাইটিস।

* অ্যালার্জি : অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ।

দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসরোগের সাময়িক অবনতি যেমন- হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা ক্রনিক ব্রংকাইটিস, ধুলোবালি মিশ্রিত বাতাস বা ধোঁয়া ইত্যাদি।

 

 

৩) দীর্ঘস্থায়ী কাশি

দীর্ঘস্থায়ী কাশি আট সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে হয়। যেমন-

দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, যেমন-যক্ষ্মা, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট, যেমন-

ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা ক্রনিক ব্রংকাইটিস

* হাঁপানি বা অ্যাজমা

* ধূমপান : ধূমপায়ীর কাশি এবংম ধূমপান থেকে COPD-এর লক্ষণ হতে পারে।

* অ্যালার্জি

* ব্রংকিয়েক্টাসিস : যেখানে ফুসফুসের শ্বাসনালি অস্বাভাবিকভাবে প্রশস্ত হয়ে যায়।

* পোস্টন্যাজাল ড্রিপ : এ ক্ষেত্রে নাকের পেছন থেকে গলা দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরে, যা রাইনাইটিস বা সাইনোসাইটিসের মতো অবস্থার কারণে হয়।

* গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ : যেখানে পাকস্থলীর অ্যাসিড বের হয়ে গলা জ্বালা করে।

* হার্ট ফেইলুরের জন্য কাশি হতে পারে।

* ফুসফুসের ক্যানসার।

* উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ওষুধ যেমন এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর, আইসিনোপ্রিল, রেমিপ্রিলের কারণেও কাশি হতে পারে।

কাশি হলে করনীয় ————-

 

কাশি সৃষ্টিতে প্রভাবকারী উপাদানগুলোকে দূর করা-

১) ধূমপান ত্যাগ করা : ধূমপান সিওপিডি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিস ছাড়াও কাশি সৃষ্টি করতে পারে, যেটিকে ধূমপায়ীদের কাশি (Smoker’s

cough) বলা হয়। ধূমপায়ীর কাশি সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কয়েকটা কাশি হয় বা ধূমপানের পর কাশি হয়, যা অল্প একটু কফ বা শ্লেষ্মা বের হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করলে ধূমপায়ীর কাশি বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি ক্রনিক ব্রংকাইটিসের কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমে যায় এবং রোগীর আয়ু বাড়ায়।

২) ধুলাবালি (Dust) এড়িয়ে চলা : ধুলাবালি ও ধোঁয়া কাশি সৃষ্টি করতে পারে। যাদের ডাস্ট-অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টও সৃষ্টি করতে পারে। রান্নার ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া ক্রনিক ব্রংকাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।

৩) অ্যালার্জেন : যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে অ্যালার্জেন কাশি বা শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। সবার সব কিছুতে অ্যালার্জি হয় না। কারও খাবারে অ্যালার্জি, কারও ধুলাবালিতে অ্যালার্জি, আবার অনেকের ওষুধে অ্যালার্জি। যার যেটায় অ্যালার্জি, সে জিনিসটি এড়িয়ে চলুন।

সর্দি কাশি হলেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া জরুরি নয়। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আমাদের শরীর ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে যায়।

******   কাশি দূর করার উপায় ——————

 

# ঔষধ বা ওষুধ এর মাধ্যমে কাশি দূর করার উপায় ———

 

১)  এন্টিহিস্টামিন (Antihistamine) : এন্টিহিস্টামিন যেমন ফেক্সফেনাডিন, রুপাটিডিন ইত্যাদি অ্যালার্জিজনিত কাশি প্রশমনে সাহায্য করে।

২)  শ্বাসনালি প্রসারণকারী ওষুধ (Bronchodilator) : শ্বাসনালি প্রসারণকারী ওষুধ যেমন সালবুটামল, টারবিউটালিন ইত্যাদি শ্বাসনালিকে প্রসারিত করে শ্লেষ্মা বের করতে সহয়তা করে; ফলে কাশি কমে যায়।

 

অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা———————————-

যদি কাশির কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে, তাহলে সেটির চিকিৎসা করলে কাশি ভালো হয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে কাশি হলে যেমন-নিউমোনিয়া; তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয় এবং রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।

৩)  অ্যালার্জি : অ্যালার্জি আছে এমন জিনিসগুলো এড়িয়ে চলুন এবং আপনার অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে অ্যান্টিহিস্টামিন গ্রহণ করে অ্যালার্জির চিকিৎসা করা যেতে পারে।

৪)  হাঁপানি : হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালিতে প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড ইনহেলার এবং শ্বাসনালি প্রসারণকারী ওষুধ ইনহেলার ব্যবহার করা হয়। তাতে শ্বাসও কমে এবং কাশিও কমে।

শ্বাসনালি প্রশস্ত করা ব্রংকোডাইলেটর দিয়ে COPD-এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। যদি কেউ ধূমপান করেন, তাহলে ছেড়ে দিলে কাশির উন্নতিতেও সাহায্য করবে।

৫)  পাকস্থলীর অ্যাসিড ঊর্ধ্বগতির (GERD) কারণে কাশি হলে, অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে অ্যান্টাসিড বা পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড উৎপন্ন কমাতে অমিপ্রাজল, এসঅমিপ্রাজল ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে; সঙ্গে সঙ্গে ডমপেরিডন ব্যবহার করবেন। এর সঙ্গে বিছানার মাথার দিকটা একটু উঁচু করে নিবেন অথবা উঁচু বালিশে ঘুমাবেন। রাতে অধিক খাবার খাবেন না। বিকালে চা, কফি বর্জন করুন।

 

# দীর্ঘদিনের কাশি দূর করার উপায়  ————–

 

মধু:

মধু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ঔষধি গুণে ভরপুর। কাশির সময় এর সেবন খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। আপনি চাইলে জলে আদা সেদ্ধ করে তাতে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন অথবা গ্রিন টি-তে মধু যোগ করে পান করতে পারেন। এতে আপনার কাশির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

ঘি:

দেশি ঘিয়ের সঙ্গে গুড় ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে একবারে খেয়ে নিন। এটি শুকনো কাশির সমস্যায় আরাম দেয়। কিন্তু প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর এই প্রতিকারটি গ্রহণ করতে হবে। তবেই আরাম পাবেন শুকনো কাশির সমস্যা থেকে।

নুন জলে গার্গল:

জলে নুন দিয়ে হালকা গরম করে নিন। এই জল দিয়ে গার্গল করলে গলার সংক্রমণ সেরে যায়। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য গলাকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে কাজ করে। এটি নালীগুলিতে প্রদাহ এবং সংক্রমণও দূর করে। তবে এই ক্ষেত্রে সবসময় শুধুমাত্র শিলা লবণ ব্যবহার করুন।

মুলেঠির পাউডার:

দুই টেবিল চামচ মুলেঠি পাউডার ২-৩ গ্লাস জলে ফুটিয়ে নিন। এবার এই জল দিয়ে প্রায় ১০-১৫ মিনিটের জন্য ভেপার বা বাষ্প নিন। এটি কাশিতেও দারুণ উপশম দেয়। মুলেঠি শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ কমাতেও কাজ করে।

গিলয় ও তুলসীর মিশ্রণ:

গিলয় এবং তুলসীর মিশ্রণ কাশির সমস্যা দূর করতে খুবই সহায়ক বলে মনে করা হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী কাশিও দূর করে। এছাড়া বেদানার খোসা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিন। এক টুকরো মুখে নিয়ে চুষতে থাকুন। এটি শুকনো কাশির জন্যও খুব উপকারী বলে মনে করা হয়।

 

রাতে কাশি কমানোর উপায় ——————-

 

রাতে কাশির মাত্রা বৃদ্ধির এক নাম্বার কারণ হলো মাধ্যাকর্ষণ (গ্রাভিটি)। জর্জিয়া ইনফেকশাস ডিজিজের ফিজিশিয়ান মিশেল ব্লাস বলেন, ‘যখন আমরা শুয়ে থাকি, তখন গলায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্লেষ্মা জমতে থাকে। এই সমস্যা এড়ানোর উপায় হচ্ছে, শরীরের উপরের অংশ একটু উঁচুতে তুলে ঘুমানো।  ফলে গলায় শ্লেষ্মা জমতে পারবে না।’ এ কাজে ওয়েজ পিলো ব্যবহার করতে পারেন।

শুষ্ক বাতাস নাক ও গলায় প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ফলে রাতে কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময় কাশির তীব্রতা রোধে ঘরে হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঘরের বাতাস আর্দ্র করবে এবং আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া সহজ হবে। অবশ্য হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহারের সময় সচেতন হতে হবে। কেননা এতে যে পানি ব্যবহার করবেন তা জীবাণুমুক্ত না হলে বাতাসে জীবাণু ভেসে বেড়াবে এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।

কাশির প্রকোপে রাতে ভালোমতো ঘুম না হলে বা কাশি কমাতে একটি কফ ড্রপ (থ্রোট লজেন্স) চুষতে থাকুন। শ্লেষ্মা উৎপাদন করে না এমন হার্ড ক্যান্ডিও চুষতে পারেন। এতে গলা প্রশান্তি পাবে এবং কাশির মাত্রা কমবে।

প্রচুর পানি পান করুন। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে বিছানায় শোয়ার আগ পর্যন্ত। তরল জাতীয় খাবার খান। পানি বা তরল গলার শ্লেষ্মা পাতলা করে। ফলে আপনি আরাম পাবেন।

অল্প মধু খান। বার্মিংহাম ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিনের অন্তর্গত ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার ফিজিশিয়ান স্টিফেন রাসেল বলেন, ‘কাশি কমাতে উষ্ণ পানি বা চায়ের সঙ্গে মধু খেলে উপকার পাওয়া যায়। শুধু মধুও খেতে পারেন।’ মধু খেলে ২ থেকে ১৮ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের রাতের কাশি কমে যায়। তবে এক বছরের কম বয়সি শিশুকে মধু খাওয়ানো যাবে না।

 

Reference:

wikipedia

www.healthline.com

www.webmd.com

কাশি কেন হয় ও কাশি দূর করার উপায় ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *