এটা বড় ধরনের এক প্রকার মানসিক রোগ যেখানে রোগী নিজেকে অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে করেন, প্রচুর মনোযোগ ও প্রশংসার দাবি করেন এবং তাদের মধ্যে থাকে সমস্যা সংকুল সম্পর্ক ও সহমর্মিতার দারুন অভাব।
নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার এর রোগীদের জীবনের বিভিন্ন দিকে সমস্যা থাকে।
অন্যের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি ও উন্নয়নে, কর্মস্থলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ব্যবসায়িক লেনদেন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের ঝামেলার শেষ থাকে না।
যখন তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা ও প্রশংসা আদায় করতে পারে না তখন তারা খুব সহজেই অসুখী অসন্তুষ্টিতে লিপ্ত হয়।
তখন তারা তাদের কাছের লোকটির সান্নিধ্য আর উপভোগ করে না, সম্পর্কে খুঁজে পায় অপরিপূর্ণতা।
সাধারণ উপসর্গগুলোঃ
১. নিজের ব্যাপারে অস্বাভাবিক রকমের উঁচু ধারণা।
২. সব সময় নিজের প্রশংসা ও স্তুতি শুনতে পছন্দ করে।
৩. তেমন কোন অর্জন ব্যতিরেকেই অধিক স্বীকৃতির প্রত্যাশা করে।
৪. অতিরঞ্জিত প্রাপ্তি প্রত্যাশী ও সীমাহীন বুদ্ধিমত্তার দাবিদার।
৫. নিজেকে উঁচু পর্যায়ের মানুষ দাবি করেন এবং সম পর্যায়ের মানুষরাই কেবল তাঁর সান্নিধ্যে আসতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন।
৬. একই রকমের বিরক্তিকর আলোচনায় অভ্যস্ত এবং যাদের নিচু হবেন তাদের হেয় প্রতিপন্ন করতে ছাড়েন না।
৭. সব সময় আলাদা খ্যাতি পছন্দ করে এবং প্রশ্নাতীত সার্থকতা প্রত্যাশা করেন।
৮. যা চান অন্যের কাছ থেকে সে সুযোগটুকু কেড়ে নেন।
৯. অন্যের প্রয়োজন ও অনুভূতিকে পাত্তা দিতে চান না।
১০. অন্যদের সাথে উদ্ধত আচরণ করেন, অভিনয়ের আশ্রয় নেন।
১১. সবকিছুতেই শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার অদম্য আগ্রহ।
** সমালোচনা ও সমস্যাকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলেঃ
১. তাদের আলাদাভাবে বিবেচনায় না রাখলে রাগান্বিত হন ও অধৈর্যশীল হয়ে পড়েন।
২. পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে যথেষ্ট সমস্যা সৃষ্টি করে।
৩. তারা রাগ ও বিরক্তি নিয়ে অন্য মানুষকে নিচু করার চেষ্টায় রত থাকে।
৪. আবেগ ও আচরণ কে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।
৫. নিজে নিখুঁত হতে না পেরে বিষন্নতায় ডুবে মরে।
৬. তারা নিরাপত্তাহীনতা, লজ্জা ও অপমানবোধে আচ্ছন্ন থাকে।
এই সমস্ত রোগীরা এটাকে রোগ মনে করে না বিধায় চিকিৎসার অধীনে যেতে চায় না।
যেহেতু তাদের চিকিৎসা না করালে ব্যক্তির নিজের, পরিবারের ও সমাজের যথেষ্ট অনিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই জোর করে হলেও তাদের চিকিৎসার আওতায় আনা উচিত।
** সাধারণত–
তারা যখন বিষণ্ণতায় ভোগে তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।এছাড়াও এই রোগের কারণে মাদক বা অ্যালকোহলে আসক্ত হলে অথবা অন্য কোনো মানসিক রোগের সৃষ্টি হলে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার জন্য যান।
প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ,
কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ।