রোগীঃ (মহিলা) ডক্টর, আমার সোল্ডারে হঠাৎ কাল থেকে প্রচন্ড ব্যথা। হাত নাড়াতেই পারছি না। এর আগে আমি দিব্যি ভাল মানুষ।
ডাক্তার: এর আগে কখনোই কি ব্যথা হয়নি?
রোগীঃ উমম… হয়েছে। অল্প ব্যথা মাঝে মধ্যে হতো। একটু হাত নাড়াচাড়া বেশি হলে হত। কিন্তু পেইন কিলার খেলে বা ম্যাসাজ করলে কিছুদিনের মধ্যেই কমে যেত। তেমন কিছু না।
ডাক্তার: আপনার বয়স কত?
রোগীঃ ৪৩।
(৩০-৪৫ বছর বয়সের মহিলাদের এই রোগ বেশি)
ডাক্তার: কোন সোল্ডারে যেন ব্যথাটা?
রোগীঃ ডান পাশে।
(যে হাতে কাজ বেশি হয়, সে হাতে এ রোগ বেশি, তবে অন্য হাতেও হতে পারে)।
ডাক্তার: আপনার ডায়াবেটিস আছে?
রোগীঃ জ্বী, ৩ বছর।
(ডায়াবেটিসের সাথে এই রোগের সম্পর্ক নাই, ফ্রোজেন সোল্ডারের সাথে আছে)।
ডাক্তার: আপনি হাতটি উপরে তোলার চেষ্টা করেন তো।
রোগীঃ পারব না ডক্টর, মনে হচ্ছে হাতের হাঁড় ভেংগে গেছে।
ডাক্তার: কোন আঘাত পেয়েছিলেন?
রোগীঃ না।
(কোন আধাত ছাড়াই এ রোগ হয়)
ডাক্তার: আমি সন্দেহ করছি, আপনার সোল্ডারের একটা টেন্ডন ফুলে গেছে এবং তাতে ক্যালসিয়াম জমেছে (supraspinatus calcific tendinitis)। তবে আমি নিশ্চিত নই।
রোগীঃ কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়?
ডাক্তার: একটা এক্সরে করলেই বুঝা যাবে। তবে সাথে একটা জয়েন্টের আলট্রাসনোগ্রাফি করলে বেস্ট হয়। কারন আরলি (Early) স্টেজে এক্সরেতে অনেক সময় মিস হয়। তাছাড়া আলট্রাতে আমরা টেন্ডনের অবস্থা বুঝতে পারব। অনেক সময় ডেন্ডন ইঞ্জুরি থাকতে পারে, টেন্ডিনাইটিস বা বারসাইটিস থাকতে পারে, এগুলো এক্সরেতে বুঝা যায় না।
আলট্রা করলাম তখনই। বিশাল একটা ক্যালসিয়াম দেখা গেল সুপ্রাস্পাইনাটাস টেন্ডনের ভিতর। টেন্ডিনাইটিস ও হাল্কা বারসাইটিস আছে।
রোগীঃ এখন কি করা? এটাতো অনেক বড়। অপারেশন করে বের করতে হবে?
ডাক্তার: না। এ রোগে আপারেশন লাগে না। এই ক্যালসিয়াম এমনিতেই গলে যাবে। তবে আমরা লোকাল এনেস্থেসিয়া দিয়ে ওই ক্যালসিয়ামটাকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি এর সাহায্যে নিডেল দিয়ে ভেংগে দিব। এর পর নরমাল স্যলাইন দিয়ে ওয়াস করে নিডেল দয়ে টেনে বের করার চেষ্টা করব। শক্ত হয়ে গেলে অনেক সময় বের হয় না কিছুই। বের না হলেও অসুবিধা নাই। এর পর একটা স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিব ওখানে। এই পদ্ধতির নাম “বারবোটেজ”। এটা পুরাতন চিকিৎসা, নতুন নয়। তবে এখন এটা আমরা উন্নত প্রযুক্তি (হাই ফ্রিকোয়েন্সি আলট্রা) দিয়ে দেখে দেখে করব। আগে ক্যালসিয়ামটা না দেখে, এনাটমি আন্দাজ করে ইরিগেশন বা ইঞ্জেকশন করা হত।
রোগি: আমার তো ভয় লাগছে। এটা কি অপারেশন?
ডাক্তার: না না। আমরা কোন ইনসিশন দিব না (কাটাকাটি নাই)। আর পুরো প্রসিডিউরে টাইম লাগবে সর্বোচ্চ ১৫-২০মি। ব্যথা বিহীন প্রক্রিয়া। শেষ করার সাথে সাথেই ব্যথা কমবে এবং বাড়ি যেতে পারবেন।
রোগীঃ ডক্টর, এটা কি আবার হবে? বার বার করতে হবে?
ডাক্তার: উম…ম, না। এমন কেইস পাইনি। রিসার্চ বলে, এটা সাধারণত বার বার হয় না।
রোগীঃ এমন কেইস আগে করেছেন?
ডাক্তার: জ্বী। প্রতি ২/৩ মাসেই ১টা কেইস পাই। সাধারণত ৩-৭% পূর্ণ বয়স্ক মানুষের এই রোগ হয়।
রোগীঃ আরেকটু বিরক্তি করছি। আরেকটা বিষয় জানার ছিল।
ডাক্তার: না…না, বলেন।
রোগীঃ আমার কেন এ রোগ হল?
ডাক্তার: রিসার্চ বলে, এ রোগের কোন সুনির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি। তবে হাতের দৈনিক কাজের সময় সোল্ডার নাড়াচাড়া তো করতেই হয়। তখন একটা হাঁড়ের (এক্রোমিয়ন, Acromion) নিচে সোল্ডারের সুপ্রাস্পাইনাটাস টেন্ডন এর ফ্রিকশন (ঘষা) হয়। অনেকের আবার এক্রোমিয়ন হাঁড়ের সেইপ (shape) একটু বাঁকানো (curved/beaked shape) থাকে। তাদের ফ্রিকশনটা বেশি হয় বলে ধারণা করা হয়। তাই তাদের এই রোগ বেশি হয়। ফ্রিকশন থেকে মাইক্রো ইঞ্জুরি, রিপেয়ার, ফাইব্রোসিস, ক্যালসিফিকেশন। প্রসেটা বুঝতে আপনার একটু কষ্ট হবে।
রোগি: যদি আমি এটার চিকিৎসা না করে রেখে দেই?
ডাক্তার: সাধারণত এই ক্যালসিয়াম গলে যায়। তাই বলে চিকিৎসা না করালে জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন ব্যথা অনেক তীব্র হতে পারে। টেন্ডন টা ছিঁড়ে যেতে পারে।
রোগীঃ বারবোটেজ ছাড়া আর কোন চিকিৎসা নাই ?
ডাক্তার: অবশ্যই আছে। বারবোটেজ করছি আপনার এই প্রচন্ড ব্যথা কমানোর জন্য এবং ক্যালসিয়াম যাতে তাড়াতাড়ি গলে যায় তার জন্য। সাথে আপনার এক্সসারসাইজ করে যেতে হবে। বরফের সেঁক ভাল কাজ দেয় ব্যথার জন্য।
(গতকাল রাতের এক রোগির সাথে কথোপকথন এর আলোকে। আজ তার বারবোটেজ করব, ইনশাহআল্লাহ।)
—————————–
ডা. মো. মঈন উদ্দীন (মনজু)
ফিজিক্যাল মেডসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন স্পেশালিস্ট।
ইন্টারভেনশনাল পেইন ও স্পোর্টস ইনজুরি স্পেশালিস্ট।