সময়ের সাথে সাথে রক্তদান নিয়ে মানুষের ভয় কেটেছে। অনেকেই রক্ত দিচ্ছেন নিয়মিত। ফেসবুকে অনেক গ্রুপ কাজ করছে। রক্ত দেওয়া নিয়ে অনেক সেলিব্রেশন এর পোস্ট চোখে পরে। ভাল লাগে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সেদিনগুলো আর নেই, যখন দেখতাম অপারেশনের মাঝে হঠাৎ রোগীর রক্ত লাগবে শুনে রক্তের সম্পর্কের লোকজন ভেগে গিয়েছে।
আর এদিকে সার্জন তার এসিস্ট্যান্টকে একটু দেখ বলে অপারেশনের ছুরি ধরিয়ে দিয়ে কোথা থেকে রক্ত নিয়ে এসে আবার অপারেশন শুরু করেছেন। আর এসিস্ট্যান্ট হঠাৎ অপারেশন শেষে দেখেন যে সার্জনের বাহুতে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ যেটা আগে ছিলনা।
তবে রক্ত দেওয়ার উৎসাহের সাথে সাথে আরো কিছু কথা বুঝতে হবে যা বিশেষজ্ঞ হিসেবে বলা আবশ্যক বলে মনে করি।
# আসলেই কি রক্ত দিতেই হবে? বাস্তবতা হল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধ দিয়েই রক্তের প্রয়োজনীয়তা দূর করা যায়। সেক্ষেত্রে আগে ওষুধ দিতে হবে। রক্ত কখনোই প্রথম চিকিৎসা নয়।
# রক্ত দিলে অসুবিধা হল রোগীর লাগবে রক্তের একটি উপাদান। আর সঞ্চালিত বাইরের রক্তে আছে হাজার হাজার বহিরাগত উপাদান। তাই একটি প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে গিয়ে বাকি হাজার হাজার অপ্রয়োজনীয় জিনিস দেহের ক্ষতি করতে পারে।
# প্রেগ্নেন্সিতে অনেকে কথায় কথায় রক্ত দেন।এটা মায়ের সাথে সাথে বাচ্চারও বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে।
আমি নিজে এমন রোগি পেয়েছি যিনি পাঁচ মাসের প্রেগ্নেন্সিতে রক্ত নিয়ে এবার হেপাটাইটিস সি তে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন মা ও বাচ্চা দুজনেরই রিস্ক। অথচ প্রেগ্নেনসিতে বেশিরভাগ সময় রক্ত লাগেনা ওষুধ দিয়েই কাজ হয়।
# বারবার রক্ত নিলে অনেক সময় শরীর আর বাইরের রক্তকে গ্রহন করতে চায়না যাকে এক ধরণের ইমিউন রিয়েকশন বলে। বিপদের উপর বিপদ।
ঢাকার সেরা নিউরোসার্জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
# অনেক সময় রক্ত দিয়ে ভাল করতে গিয়ে উলটা নানারকম রিয়েকশন হয়। হার্ট ফেল করে ফেলা, ফুস্ফুসে প্রাণঘাতি আঘাত (TRALI), কিডনী নষ্ট হয়ে যাওয়া অনেক কিছুই হতে পারে।
# অনেকেই নিকটাত্মীয় খুঁজে খুঁজে রক্ত দেন। আর সম্মানিত রক্তরোগ বিশেষজ্ঞগণ বলেন নিকটাত্মীয় থেকে রক্ত নিলে গ্রাফট ভার্সেস হোস্ট ডিজিজ নামে একটি দূর্লভ রিয়েকশন হতে পারে যাতে মৃত্যু আবশ্যম্ভাবি বলা যায়। এত বড় রিস্ক কেন নিবেন।
# হোল ব্লাড নামক প্রাচীন চিকিৎসা এই একবিংশ শতকে আর চলে না। রক্তকে তিন ভাগ করে যার যা লাগবে শুধু তাই দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটা অনেকেই মানতে চান না।
# অনেকেই প্লেটলেট একটু কমলেই প্লেটলেট দেন যা একেবারেই ভুল। আবার আইটিপি জাতীয় রোগে প্লেটলেট দেয়া নিষেধ (contraindicated) অথচ অনেকেই দেন।
# ডিআইসিতে অনেকেই এত প্লাসমা দেন যা এই রোগ আরো বাড়িয়ে দেয়। আমরা বুঝতেই পারিনা এখানে খাল কেটে কুমির আসছে।
# রক্ত দিয়ে দিয়ে বাহ্যিক ভাল লাগার কারণে অনেক সময় আর রক্ত কমার কারণ নিয়ে চিন্তা করা হয়না। শেষে একসময়ের নিরাময়যোগ্য রোগ অনিরাময়যোগ্য হয়ে যায়।
# ব্লাড দেয়ার ক্যাম্পগুলোতে যেভাবে রক্ত নেওয়া হয় তাতে অনেক রক্ত অপচয় হয়। রক্ত এমনভাবে নিতে হবে যেন রক্তের তিনটি উপাদান আলাদা করে তিনজন রোগীর কাজে লাগে।
কথা অনেক, সময় কম।
সহজভাবে বললে চেষ্টা করা উচিৎ রক্ত দেওয়া নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সম্মানিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের পরামর্শ নেওয়া। তাতে সবাই উপকৃত হবেন ইনশা আল্লহ।
———————————
ডাঃ মু জামাল উদ্দিন তানিন
রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম
Source: www.facebook.com