কিছুক্ষণ মোবাইলে কথা বললে হাত ঝি ঝি করে অথবা মাঝরাতে হাত ব্যথা বা অবশ হয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় ; এ সমস্যায় অনেকেই ভুগেন, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলারা। যার অন্যতম কারণ কারপাল টানেল সিন্ড্রোম বা সি.টি.এস।
সি.টি.এস কি? কেন হয় ?
কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম এক ধরণের কব্জীর স্নায়ুচাপ জনিত রোগ। হাতের তালুতে মিডিয়ান নার্ভ নামে একটি স্নায়ু থাকে যা বুড়ো আঙ্গুল, তর্জনী ও মধ্যমার অনুভূতি ও নড়াচড়া নিয়ন্ত্রন করে। এই নার্ভটা কব্জীর ভিতরে একটি সরু সুড়ঙ্গের মত জায়গা দিয়ে হাতে প্রবেশ করে। এই সুড়ঙ্গটির নাম কার্পাল টানেল (কব্জীর হাড়কে কার্পাল বলে আর টানেল অর্থ সুড়ঙ্গ)। কোন কারণে যদি এই অংশটিতে চাপ পড়ে, তা নার্ভের উপর ও প্রভাব ফেলে। ফলে কব্জীতে তীব্র ব্যথা হয়। একেই বলে সি.টি.এস বা কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম।
সিটিএস” এর কারন কি ?
সিটিএস এর সাথে সম্পর্কিত কিছু সাধারণ কারণ হলোঃ
→গর্ভকালীন সময়
→থাইরয়েডের সমস্যা
→ডায়াবেটিস
→উচ্চ রক্তচাপ
→অতিরিক্ত ওজন
→কব্জিতে আর্থ্রাইটিস, ইত্যাদি
→অনেকক্ষেত্রে এটি বংশগত হতে পারে।
কারা ঝুঁকিতে আছে ?
→পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই রোগ তিনগুণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে
→সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে দেখা যায়
→যাদের খাবারে বেশি লবণ গ্রহণ, ধূমপান ইত্যাদির অভ্যাস আছে
→যারা দীর্ঘ সময় ধরে বারবার একই কাজ করেন।
যেমনঃ মাউস, কী-বোর্ড, ভাইব্রেশন যন্ত্রের ব্যবহার
লক্ষণগুলো কি কি ?
→কব্জি ও হাতে ব্যাথা, অস্বস্তি ও জ্বালাপোড়া করা
→হাত অসাড় মনে হওয়া, হাতে শক্তি না পাওয়া
→মোবাইলে কথা বলার সময় হাতে ঝিঝি ও দুর্বলতা লাগা
→মাঝরাতে হাত ব্যথা বা অবশ হয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়,
→আবার হাত ঝাড়লে ভালো লাগে
→আপনার হাতের আঙুলে অসাড়তা ও ব্যথা
কিভাবে সি.টি.এস নির্ণয় করা হয় ?
রোগের ইতিহাস জানা এবং বিশেষজ্ঞ কর্তৃক নিজ হাতে কব্জী ও হাত পরীক্ষা করা জরুরী, এর সাথে রোগটি নিশ্চিতকরণ ও অন্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন। যেমনঃ
→ডায়াবেটিস পরীক্ষা
→থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা
→কব্জীর এক্স-রে
→কব্জীর আল্ট্রাসনোগ্রাম
→কব্জীর নার্ভের এনসিএস, ইত্যাদি
চিকিৎসা কি ?
এ রোগের চিকিৎসার জন্য একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সমন্বিত চিকিৎসা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ……
- জীবনধাঁরার পরিবর্তন
- ওষুধ
- ব্যায়াম
- ফিজিক্যাল থেরাপি
- অর্থোসিস
- ইনজেকশন
- অপারেশন
আসুন একটু বিস্তারিত জানা যাক,,,,
♣জীবনধাঁরার পরিবর্তনঃ
→যাঁরা টেবিলে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন, লেখেন কিংবা কম্পিউটারে টাইপ করেন,
তাঁরা প্রতি ৩০ মিনিট পরপর সামান্য বিরতি নিতে পারেন।
→কাজের সময় হাতের বাহু যেন বিশ্রামে থাকে
→কাজের সময় হাত টেবিলের সমান্তরালে করে নিন।
♣ওষুধঃ
ব্যথানাশক ওষুধ ও কব্জীতে নির্দিষ্ট নিয়মে মলম দিয়ে ম্যাসাজ করা।
♣ব্যায়ামঃ
কব্জীর স্ট্রেসিং বা প্রসারণ করন ব্যায়াম
হাতের মাংস পেশীর বলকরন ব্যায়াম, ইত্যাদি
♣ফিজিক্যাল থেরাপিঃ
ফিজিওথেরাপির মধ্যে আলট্রাসাউন্ড ও টেনস থেরাপি বেশ কার্যকর।
♣অর্থোসিসঃ
→রাতের বেলা কব্জীর অবস্থান ঠিক রাখার জন্য “রেস্টিং স্প্লিন্ট” এবং
→কাজের সময় কব্জীতে “রিষ্ট ব্রেস” ব্যবহার করা যেতে পারে
♣ইনজেকশনঃ
ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি বা তীব্র হলে, আধুনিক পদ্ধতিতে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে মিডিয়ান নার্ভের চারপাশে ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।
♦রোগের পরিণতি কি?
→কষ্টদায়ক হলেও , এটি কোন প্রাণঘাতী রোগ নয়
→সঠিক চিকিৎসা নিলে এ রোগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়
→চিকিৎসা না নিলে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হাতের অবশ ভাব ও দূর্বলতা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
→এমনকি হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে।
♦সম্পাদনায় ————-
ডাঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান
এমবিবিএস, এফসিপিএস (ফিজিক্যাল মেডিসিন)
বাত-ব্যথা, মেরুদন্ড-জয়েন্ট রোগ, আর্থ্রাইটিস,
স্ট্রোক ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট, পার্কভিউ হসপিটাল প্রাঃ লিঃ,
পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম।
যোগাযোগঃ ০১৩১২ ৩৯ ৫৬ ৩৮