বেশ কিছুদিন আগে ইন্ডিয়া ফেরত একজন রোগী এসেছিলেন। তাঁর বোন ম্যারো পরীক্ষার রিপোর্ট ইন্ডিয়ায় তিনবার করে তিন রকম রিপোর্ট দিল।
রোগীর ছেলে ঢাকা ভার্সিটি পড়েন।
বললাম, এরকম যদি পিজি হাসপাতালে হতো, কি করতেন?
কিছু বলেন না। চুপ।
বললাম, গিয়ে মারামারি করতেন না?
এবারো চুপ।
আর কিছু বললাম না। জিজ্ঞেস করে জানলাম টেস্ট এর বেশ দাম নিয়েছে। বাংলাদেশে আমরা এর চেয়ে কম দামেই সেই পরীক্ষা করি।
যাই হোক ল্যাব টেস্ট নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। মজার ব্যপার হল অন্যান্য এর-ওর সাথে ল্যাব এর সাথে সংশ্লিষ্ট নন এমন ডাক্তাররাও বলেন। এই ধরণের যারা নিজে কখনো মাঠে না নেমে বড় বড় কথা বলেন তাদের জন্য কিছু কথা।
যেসব কারণে টেস্ট রিপোর্ট ভুল বাঁ ভিন্ন হতে পারেঃ
১. অনেক টেস্ট এরই false negative বা false positive রিপোর্ট এর কথা মেডিকেল টেক্সট বইতেই বলা আছে। তাই রোগ থেকেও টেস্ট এ নেই বলা বা রোগ না থেকেও আছে বলার অনেক কারণ বিশ্বের সবখানেই নতুন কিছু নয়।
চট্টগ্রামের সেরা ১০ স্ত্রী ও প্রসূতীরোগ বিশেষজ্ঞ
২. আপনার একেবারে নতুন কেনা গাড়িটি যেমন হঠাৎ বিকল হয়ে যায় তেমন ল্যাবের মেশিনও কিছু ভুল রিপোর্ট দিতে পারে। ভারতের কোটি কোটি ডলারের চন্দ্রযান শেষ মূহুর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা মনে করুন।
৩. মেশিনে যে রি-এজেন্ট ব্যাবহার করা হয় তার উপর নির্ভর করে টেস্ট এর রেসাল্ট পরিবর্তন হতে পারে। বিভিন্ন রি এজেন্ট বিভিন্ন রেসাল্ট দেয়।
চট্টগ্রামের সেরা ১০ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
৪. টেস্ট এর নাম একি হলেও টেস্ট করার পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে টেস্ট এর রেসাল্ট ভিন্ন হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন মেশিনে একই টেস্ট এর ভিন্ন রিপোর্ট আসতে পারে।
৫. সব ঠিক থাকলেও একই রোগির টেস্ট এর রিপোর্ট সকালে এক রকম বিকালে একরকম আসতে পারে।
চট্টগ্রামের সেরা ১০ নিউরো-মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
৬. রোগী যেসব ওষুধ পাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে টেস্ট এর রিপোর্ট পরিবর্তন হতে পারে।
৭. মহিলাদের প্রেগ্নেন্সি, পিরিয়ড এসবের উপর কিছু টেস্ট এর ভিন্ন ভিন্ন রেসাল্ট নির্ভর করে।
চট্টগ্রামের সেরা ১০ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
৮. রক্তরোগের ক্ষেত্রে ওষুধ রক্ত এসব পাওয়ার উপর টেস্ট এর রিপোর্ট ব্যাপক পরবর্তন হয়।
৯. কিছু human error সবখানে সব দেশেই হয়। টাইপিং মিস্টেক, স্যাম্পল এক্সচেঞ্জ, স্যাম্পল নষ্ট হয়ে যাওয়া, স্যাম্পল পর্যাপ্ত না হওয়া ইত্যাদি। অধিক টেস্ট স্বল্প সময়ে করতে গেলেও ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ মানবিক ভুল করতে পারেন।
চট্টগ্রামের সেরা ১০ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
১০. রোগীরা অনেক সময় যেভাবে ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয়েছে সেভাবে প্রিপারেশন নেন না যা টেস্ট রিপোর্ট এ প্রভাব ফেলে কিন্তু ডাক্তার সাহেবের পক্ষে জানা সম্ভব হয়না যে রোগী আসলে ঠিক নিয়মে টেস্ট করেননি।
১১. বোনম্যারোর (Bone marrow) মত টেস্টগুলো সম্মানিত বিশেষজ্ঞগণের মধ্যে ভিন্নমত দেখাতে পারে। যেমন একটি কবিতা দুই জনের কাছে দুই রকম লাগতে পারে।
চট্টগ্রামের সেরা ১০ মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞ
১২. CBC, PBF শুধু মেশিনের রিপোর্ট আর একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের চোখে দেখা রিপোর্ট অনেক ভিন্নতা দেখায়।
১৩. নিজে নিজে থ্যালাসেমিয়ার টেস্ট করতে গেলে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে।
লিস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। সেদিকে না গিয়ে সমাধানের কথা বলি।
সমাধান হলঃ
১. সম্মানিত চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে টেস্ট করবেন না।
২. সম্মানিত চিকিৎসক এর ইন্সট্রাকশন মেনে যথাযথ সময়ে ও নিয়মে টেস্ট করবেন।
চট্টগ্রামের সেরা ১০ নাক,কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ
৩. টেস্ট এর রিপোর্ট রোগীর সাথে না মিললে সংশ্লিষ্ট ল্যাব, টেকনোলজিস্ট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর সাথে ক্লিনিশিয়ান নিজেই কথা বলবেন।
৪. প্রয়োজনে টেস্ট রিপিট করতে হতে পারে।
৫. কিছু জটিল টেস্ট যেমন বোনম্যারো পরীক্ষার আগে অবশ্যই সম্মানিত বিশেষজ্ঞ হেমাটোলোজিস্ট যিনি টেস্ট করবেন, তাঁর সাথে রোগির একটি সাক্ষাত আবশ্যক।
৬. শুধু টেস্ট এর রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা হয় না। আবার শুধু রোগী দেখেও চিকিৎসা হয় না। এই ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
চট্টগ্রামের সেরা ১০ চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসা একটি জটিল ব্যাপার। টেস্ট গুলো দিন দিন আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাপারে সবার সচেতন থাকতে হবে। একজন চিকিৎসক সব সময় চান তাঁর রোগী ভাল থাকুন। তাই রোগীদেরও হুজুগ বাদ দিয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ল্যাব এর কোয়ালিটি কন্ট্রোল নিয়ে ল্যাবগুলোকে সচেতন হতে হবে। ভাল মেশিন, ভাল রিয়েজেন্ট, ভাল ল্যাব টেকনোলজিস্ট সবাই মিলে টিমওয়ার্ক ভাল হলেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভাল রিপোর্ট দিতে পারবেন যা দেশে অনেক ভাল ল্যাবেই সুন্দরভাবে হচ্ছে।
আল্লহ আমাদের সবাইকে ভাল রাখুন।
ডাঃ মু জামাল উদ্দিন তানিন
রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম।