ফ্রোজেন শোল্ডার কি ?
ফ্রোজেন শোল্ডার বা অ্যাডহেসিভ ক্যাপ্সুলাইটিস হল এমন একটা অবস্থা যা কাঁধ স্টিফ বা ব্যথা অথবা নড়াচড়ায় অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এটি কোন আপাত কারণ ছাড়াই কাঁধের নড়াচড়াকে সীমাবদ্ধ করে। আন্তর্জাতিকভাবে, ফ্রোজেন শোল্ডারের ব্যাপকতা ২%-৩%-এর মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। এটি সাধারণত ৪০-৭০ বছর বয়সে ঘটে এবং পুরুষের তুলনায় মহিলাদের প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ফ্রোজেন শোল্ডার সমস্যাটি তিনটি স্টেজ/ পর্যায়ে লক্ষণ দেখা দেয় যেমন-
১। র্ফাস্ট স্টেজ: র্ফাস্ট স্টেজ কে বলা হয় ফ্রিজিং স্টেজ। এই স্টেজ এ ব্যথা থাকে কিন্তুু হাত তুলতে তেমন সমস্যা হয় না। রাত এবং সকালে ব্যথা থাকতে পারে। এই স্টেজ ৩-৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
২। সেকেন্ড স্টেজ:
সেকেন্ড স্টেজ বলা হয় ফ্রোজেন স্টেজ। সেকেন্ড স্টেজ এ ব্যথা তীব্রতা বেড়ে যায় তার সঙ্গে হাতের মুভমেন্ট কমে যায়,রাত এবং সকালে ব্যথা বেড়ে য়ায। যার ফলে-
– কাঁধ থেকে হাতটা ওপরে ওঠাতে গেলেই ব্যথা অথবা হাত মাথার ওপরে ওঠাতেই কষ্ট হয়, পেছনে নিতে কিংবা জামা পরতে গিয়ে কষ্ট হয়
– কাঁধ শক্ত হয়ে যায়।
– কাঁধ থেকে হাত নড়াতে কষ্ট হয়
– আক্রান্ত পাশে শুতে কষ্ট হয়
এই পর্যায় টি ৪-১২ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
৩।র্থাড স্টেজ:
র্থাড স্টেজকে বলা হয় স্টেজ ওফ রিকাভারি, অর্থাৎ এই সতেজ এ হারিয়ে যাওয়া মুভমেন্টগুলো পুনরায় ফিরে আসে এবং ব্যথা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। চিকিৎসা না নিলে এটি ১-৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
শনাক্তকরণঃ
ফ্রোজেন শোল্ডারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এক্স-রে বা এমআরআই করে ক্যাপসুলে প্রদাহের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক পরীক্ষা LAM/ ল্যাম টেস্টের মাধ্যমে সমস্যা নিশ্চিত করেন।
চিকিৎসাঃ
সম্মানিত ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং রোগীর ইচ্ছা শক্তি এবং ধৈর্য এই চিকিৎসার মূল প্রেরণা।
যেহেতু এটি দীর্ঘদিন যাবত থাকে তাই অবশ্যই একজন ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন প্রয়োজন।
ফ্রোজেন শোল্ডারের রোগীর কাছে মনে হয় ব্যথাই প্রধান সমস্যা। কিন্তু পরবর্তীতে মূল সমস্যা হয় জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। রোগী ব্যথার ভয়ে হাত নাড়ানো বন্ধ রাখলে জয়েন্ট আরও শক্ত হয়ে যাবে। তাই এ ক্ষেত্রে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রেখে হাত নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাঃ
তিনটি পর্যায় রয়েছে, তাই এর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাও পর্যায় অনুযায়ী করতে হবে। ফ্রোজেন শোল্ডারের রোগীদের জন্য ইলেক্ট্রোথেরাপি এবং ম্যানুয়াল চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-
ইলেক্ট্রোথেরাপি:
১) TENS
২) SWD
৩) UST
ম্যানুয়াল চিকিৎসা :
– MWM (Mulligan technique)
– Gliding
– Shoulder girdle mobilaization
– Second stage (Intra-articular injection)
– এ ছাড়াও সেল্ফ থেরাপিউটিক এক্সারসাইজগুলো- এগুলোর মধ্যে -পেন্ডুলাম এক্সারসাইজ এবং ট্র্যাপ ফ্লাই।
– স্ক্যাপুলার স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ,
– পুলি এক্সারসাইজ (এবডাকশন পুলি)
-ওয়াল ক্লামভিং এক্সারসাইজ
ফিজিওথেরাপি সর্বদা একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শে গ্রহণ করবেন। ভালো থাকবেন।
ইফতেখারুল ইসলাম পাঠান
ফিজিওথেরাপি ইনচার্জ
সি এস সি আর (CSCR Hospital)
যোগাযোগ : 01988594603