বর্তমানে পৃথিবীতে থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক। আমরা অনেকে এই রোগের নাম শুনলেও বা আশেপাশে আক্রান্ত রোগী দেখলে কিংবা নিজে আক্রান্ত হলেও আমরা এই রোগ সম্পর্কে অনেকেই খুব একটা জানিনা। চলুন তাহলে এই সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।
থাইরয়েড কি ?
থাইরয়েড হল আমাদের একটি গ্রন্থি যা আমাদের গলার সামনের দিকে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে কিছু প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন আমাদের বিপাক সহ আরো বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হরমোন তৈরির জন্য এই গ্রন্থিটির প্রয়োজনীয় পরমাণে আয়োডিনের দরকার হয়। উক্ত হরমোন আমাদের বিপাক ক্রিয়া সহ বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
থাইরয়েড গ্রন্থি সাধারণত দুই ধরণের হরমোন নিঃসরণ করে:
1. ট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন(T3)
2. থাইরক্সিন(T4)
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জন্মের সময় এই গ্রন্থি ঠিকভাবে তৈরি না হলে কিংবা প্রয়োজনমত হরমোন তৈরি করতে না পারলে বাচ্চাদের শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
আমাদের শরীরে যতটুকু হরমোন প্রয়োজন তার চেয়ে কম কিংবা বেশি পরিমাণে এই হরমোন তৈরি হলে তখন নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে এই হরমোন তৈরি হলে হাইপোথাইরয়ডিজম হতে পারে। আবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে এই হরমোন উৎপন্ন হলে হাইপারথাইরয়ডিজম হতে পারে। উভয়ই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়াও উক্ত গ্রন্থিতে আরো বিভিন্ন রকমের রোগ হতে পারে। সাধারণত বেশি হয় এমন কিছু রোগ নিয়ে আলোচনা করা যাকঃ
• হাইপোথাইরয়ডিজম(Hypothyroidism)
• হাইপারথাইরয়ডিজম(Hyperthyroidism)
• গয়েটার(Goiter)
• নডিউল(Nodule)
• থাইরয়েড ক্যান্সার(Thyroid Cancer)
• গ্রেভস ডিজিজ(Graves’ disease)
# হাইপোথাইরয়ডিজম(Hypothyroidism )
থাইরয়েড গ্রন্থি যদি প্রয়োজনের তুলনায় কম হরমোন উৎপাদন করে তখন হাইপোথাইরয়ডিজম হবার সম্ভাবনা আছে। যদিও অনেক সময় এর চোখে পড়ার মত লক্ষণ দেখা যায়না, যার ফলে অনেকে বুঝতেই পারেন না তারা হাইপোথাইরয়ডিজম এ আক্রান্ত।
তবে হাইপোথাইরয়ডিজম হলে সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলঃ
• ক্লান্তি কিংবা অবসাদ অনুভব করা
• কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা।
• শুষ্ক ত্বক
• কোষ্ঠকাঠিন্য
• অল্পতেই শীত শীত লাগবে
• পেশী এবং বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথা অনুভূত হবে।
• বিষণ্ণতা থাকবে
• মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত পরিমাণ রক্তক্ষরণ হতে পারে।
• পালস রেট কম থাকতে পারে স্বাভাবিক এর তুলনায়।
# হাইপারথাইরয়ডিজম (Hyperthyroidism )
এক্ষেত্রে হাইপারথাইরয়ডিজম এর উল্টো ঘটনা ঘটে। থাইরয়েড গ্রন্থি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হরমোন উৎপাদন করলে হাইপারথাইরয়ডিজম হবার সম্ভাবনা থাকে।
হাইপারথাইরয়ডিজম হলে সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায়ঃ
• অতিরিক্ত ঘাম
• গরম সহ্য না করতে পারা
• হজমে সমস্যা
• দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া।
• অস্থিরতা অনুভব করা।
• ওজন কমে যাওয়া
• পালস রেট বেড়ে যাওয়া
• ঠিকমত ঘুম না হওয়া
• চুল পাতলা এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া
• ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া
• মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব অনিয়মত কিংবা খুব অল্প পরিমাণে হওয়া।
• বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। খুব খারাপ অবস্থা হলে এবং হাইপারথাইরয়ডিজম এর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নেয়া হলে থাইরয়েড স্টর্ম(thyroid storm) হতে পারে। এতে রোগীর রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, জ্বর আসতে পারে এবং হৃদস্পন্দন বন্ধ ও হয়ে যেতে পারে।
রোগ সনাক্তকরণঃ
থাইরয়েড এর বিভিন্ন রোগ সনাক্তকরণে সাধারণত নিচের পরীক্ষাগুলো করা হয়ঃ
রক্ত পরীক্ষাঃ
রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা যায়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত নিচের টেস্টগুলো কতা হয়ঃ
১) Thyroid stimulating hormone(TSH)
২) Thyroxine hormone(T4)
৩) Tri-iodothyronine hormone(T3)
৪) TSH receptor antibody(TSI)
৫) Anti-thyroid anti-body
৬) নিউক্লিয়ার থাইরয়েড স্ক্যান,
৭) থাইরয়েড আল্ট্রাসাউন্ড,
৮) কম্পিউটারাইজড এক্সিয়াল টোমোগ্রাফি স্ক্যান (Computerized axial tomography scan)
ডাঃ দেলোয়ার হোসেন
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল