বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসুস্থ হওয়ার পূর্ব লক্ষণ হিসেবে গলা ব্যথা করে। গলা ব্যথার অপর নাম হলো ফ্যারিঞ্জাইটিস। সাধারণত ঠান্ডা এবং ফ্লুর (ইনফ্লুয়েঞ্জা) মতো জীবাণুর সংক্রমণের মাধ্যমে গলার এই সমস্যা হয়।টনসিলের কারণেও গলা ব্যথা হয়। গলায় শুষ্ক চুলকানি হয় এবং খাবার গিলতে ও ঢোঁক গিলতে সমস্যা হয়।
গলা ব্যথাকে অনেকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। গলা ব্যথা অনেক সময় মারাত্মক অসুখের উপসর্গের কারণ হতে পারে।
গলা ব্যথার কারণঃ
# সর্দি,ফ্লু, ভাইরাল ইনফেকশন
# ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন
# এলার্জি
# গরম ও শুষ্ক বাতাস
# ধোয়া ও কেমিক্যাল
# আঘাত
# গ্যাস্ট্রোইসুফ্যাগাল রিফ্ল্যাক্স ডিজিস
# টিউমার
গলা ব্যথার লক্ষণঃ
# জ্বালা পোড়া করা
# গলা শুষ্ক হয়ে যাওয়া
# গলা খুশখুশ করা
# নাক বন্ধ
# কফ জমা
# গলার টোন বসে যাওয়া
# ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া
# জ্বর–৬ মাসের নীচে বয়সী শিশুদের জ্বর ১০১ ফারেনহাইট এবং বড়দের ক্ষেত্রে তা ১০৩ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে যাওয়া।
কাদের গলা ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বেশি ?
* শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা
* যারা ধূমপান করে অথবা ধূমপায়ী ব্যক্তির কাছাকাছি থাকে
* ধুলাবালু থেকে যাদের অ্যালার্জি হয়
* ঘরে ব্যবহৃত জ্বালানি ও রাসায়নিক বস্তুর সংস্পর্শে এলে
* যাদের দীর্ঘদিন ধরে সাইনাসের সমস্যা আছে
* যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম
গলা ব্যথা থেকে কি জটিলতা দেখা দিতে পারে ?
গলা ব্যথার ফলে অনেক মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের কারণে টনসিলে প্রদাহ, সাইনাসে প্রদাহ, কানের সংক্রমণ, কিডনির প্রদাহ, বাতজ্বর দেখা দিতে পারে।
গলা ব্যথা হলে করণীয় কি ?
** সাবান দিয়ে ভালো ভাবে হাত ধুতে হবে।নোংরা হাতে মুখে হাত দেয়া যাবে না।
** অন্যের প্লেট, গ্লাস ব্যবহার করা যাবে না।
** বাড়ির আবহাওয়া আদ্র রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
** রান্নার চুলার ধোয়া বের হবার ব্যবস্থা করতে হবে।
** ধূমপান করা যাবে না।
** প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খাতে হবে।
কখন ডাক্তার অবশ্যই লাগবে ?
# ঢোক গিলতে বেশী সুবিধা হলে
# শ্বাসকষ্ট হলে
# মুখের লালার সাথে রক্ত আসলে
# গলায় পুঁজ দেখা দিলে
গলা ব্যথার জন্য কি কি টেস্ট করতে হতে পারে ?
# Throat Culture
# Allergy Test
# MRI
# CT- Scan
# CBC
গলা ব্যথার ঔষধঃ
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে গলা ব্যথা এমনি এমনি ভালো হতে যায়।ব্যথার জন্য “প্যারাসিটামল” জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন তবে ইনফেকশন বেশী হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক খেতে হবে।কফের জন্য সিরাপ খেতে পারেন।
গলা ব্যথার ঘরোয়া ঔষধঃ
মেথি-
গবেষণায় দেখা গেছে, মেথির অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান ব্যথা উপশম করতে পারে ও ক্ষতিকর ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভবতী নারীদের মেথি এড়িয়ে চলাই ভালো।
রসুন-
রসুনে থাকা প্রদাহবিরোধী উপাদানসমূহ গলা ব্যথা দ্রুত সারাতে সক্ষম। তাছাড়া রসুন দাঁতে লুকিয়ে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি ঘটায়
বেকিং সোডা-
বেকিং সোডার কার্যকারিতা অনেক। গলা ব্যথা সারাতে বেকিং সোডা ও লবণ পানি দিয়ে গার্গেল করতে পারেন। এই দ্রবণে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানসমূহ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে।
ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুসারে, ১ কাপ গরম পানি, ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা এবং ১/৪ চা চামচ লবণ মিশিয়ে প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর গার্গেল করলে দ্রুত গলা ব্যথা সেরে যায়।
গোলমরিচ-
শুধু রান্না স্বাদ বাড়াতেই নয়, শারীরিক বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখতেও কার্যকর গোলমরিচ। বিশেষ করে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয় এতে থাকা উপাদান। গোলমরিচে মেন্থল বৈশিষ্ট্য আছে। যা পাতলা শ্লেষ্মা, গলা ব্যথা ও কাশি থেকে তাৎক্ষণিত স্বস্তি দেয়।
এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে। আস্ত গোলমরিচের দানা পানিতে ফুটিয়ে চায়ের মতো করে পান করলে দ্রুত গলা ব্যথায় স্বস্তি মিলবে।
মধু-
চায়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারে গলা ব্যথা সারাতে। এটি গলা ব্যথার সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকার। গবেষণায় দেখা গেছে, মধু কাশির সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকর।
গবেষণায় দেখা যায়, মধুতে থাকা উপাদানসমূহ বিভিন্ন ক্ষত নিরাময় ও গলার প্রদাহে দ্রুততর নিরাময় ঘটায়।
Reference: https://www.wikipedia.org/